পাঁচ বছর আগের ‘দুঃস্বপ্ন’ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ?


অনুশীলনে জয়ের অঙ্ক কষছে বাংলাদেশ দল। সে অঙ্ক আজ মাঠে মিলবে তো? ছবি: এএফপি

কলম্বোয় ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আজ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ম্যাচটা জিততেই হবে সফরকারী দলকে। টানা হারের বৃত্ত থেকে বের হতেও জয়টা জরুরি
সে বছর এর চেয়ে ভালোভাবে শেষ হতে পারত না। নিউজিল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখা দেয় পরের বছরের শুরু থেকে। ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ধবলধোলাই হয় বাংলাদেশ। হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া থেমেছিল আরেকটি ধবলধোলাই দিয়ে, আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল টানা ১২ ওয়ানডে। তবে দিন বদলেছে। এখন আর সেসব দিন ফিরে আসার শঙ্কা নেই। সত্যিই নেই?
Dutch Bangla Bank

বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কায় খেলতে গিয়ে কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলছে না বাংলাদেশ দলের। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে তামিম-মুশফিকরা এরই মধ্যে ‘লঙ্কাওয়াশে’র শঙ্কার মুখে দাঁড়িয়ে। আজকের ম্যাচটি জিততে না পারলে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই হারের লজ্জায় পড়তে হবে বাংলাদেশকে। আরও একটি লজ্জার মুখে পড়তে হবে, যেটির মুখোমুখি গত পাঁচ বছরে হতে হয়নি। বিশ্বকাপের শেষ দুই ম্যাচে হারের পর লঙ্কাভূমে তিন হার—আজ হারলে টানা পাঁচ ওয়ানডেতে হারবে দল। এমন কিছুর সঙ্গে দেখা হয়নি শেষ পাঁচটি বছর।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সমীহ–জাগানিয়া দল হলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বাংলাদেশ দলই আদায় করে নিতে পারেনি। দল ও কোচিং স্টাফ মিলিয়ে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। তা, দু-একটি ম্যাচে দল হারতেই পারে। তা বটে, তবে হারের ধরনে দুশ্চিন্তার উদ্রেক ঘটলে দোষ দেওয়া যায় না। সাকিব-মাশরাফির অনুপস্থিতিতে এ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ যে তেমন কোনো লড়াই গড়তে পারেনি।
দুশ্চিন্তাটা উঁকি দিচ্ছে। বাংলাদেশ টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে বসবে না তো! ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করে ২০১৩ সালের ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল। পরের বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কাছে তিন ম্যাচ সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে শুরু, এরপর এশিয়া কাপে ভারত ও আফগানিস্তানের কাছে হার—এই ছিল টানা পাঁচ হার। কিন্তু হারের বৃত্ত ভাঙেনি। টানা আরও সাত ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ, যা থেমেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর।
ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই আশা করতে পারেন, বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই সে পথে হাঁটবে না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ জিতলেই তো টানা হারের বৃত্ত ছেদ হবে। তবে দলের ‘বদভ্যাস’ও মাথায় রাখতে হবে। একবার টানা হারতে শুরু করলে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসার নজির যে বেশ কম। সবশেষ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু, এরপর বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের কাছে হারের পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে প্রথম দুই ম্যাচেও হার— টানা পাঁচে দুশ্চিন্তাটা তাই থেকেই যায়। 
বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা সময় ছিল, যখন হারের পর হারে ডুবতে হতো হতাশার সমুদ্রে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি—এ সময়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে বাংলাদেশ জয়বঞ্চিত ছিল ৭৫ ম্যাচ (৭১ হার, ২ ড্র, ২ নো রেজাল্ট)। আর ওয়ানডেতে টানা সর্বোচ্চ ২৩ ম্যাচ হারের অনাকাঙ্ক্ষিত বিশ্ব রেকর্ডও এ সময়ে গড়েছে বাংলাদেশ। ৮ অক্টোবর ১৯৯৯ থেকে ৯ অক্টোবর ২০০২, অনাকাঙ্ক্ষিত বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সেই বিভীষিকাময় সময়!
যেসব সমর্থক সে সময়ের সাক্ষী, তাদের কাছে টানা দুই-তিন-চার কিংবা পাঁচ হারও কিন্তু ভয়–জাগানিয়া।

Comments