চাকরিজিবী স্বামী-স্ত্রীর সংসার জীবন

দাম্পত্য কলহ ও সমাধান
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সহযোগী। উভয়ের সমঝোতা, সহযোগিতা ও যৌথ প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর সংসার গড়ে ওঠে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কি ধরণের হবে, সে ব্যাপারে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এক অতুলনীয় মহান আদর্শ। তার ব্যাপারে তার স্ত্রীগণ চমৎকার ধারণা পোষণ করতেন। তিনিও তাদের ভূয়সী প্রশংসা করতেন।
আসলে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য এমন অবস্থাই কাম্য। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি কর্তব্য পালনে পরিবার একটি সুখের আবাসে পরিণত হয়। আবার কর্তব্য অবহেলার কারণে পারিবারিক জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

দাম্পত্য জীবন কোন খেল তামাশার বিষয় নয়। এতে বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। আর এ উপলব্ধির অভাবে অনেকাংশে কলহ ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরিবারের স্বামী- স্ত্রী একটি পাখির দুইটি পাখা। সুতরাং তাদের সমমর্যাদার ভিত্তিতে আচরণ করা প্রয়োজন। সে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে। স্ত্রী তার স্বামীর, পরিজনের এবং সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক। তাকে এ ব্যাপারেও জবাবদিহি করতে হবে। এ সব দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এখানে সব দায়িত্বের কথা বলা হয়নি। প্রধান দায়িত্বের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব বোধ এবং আন্তরিকতার ফলে দাম্পত্য জীবন তথা সংসার একটি সুখের ঠিকানায় পরিণত হয়। আর এতে স্বামী -স্ত্রী কারোর অবদান কম নয়। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রীদের দায়িত্ব অধিক। স্ত্রীকে সংসার এবং পরিবারের এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে স্বামীর সেখানে আসার জন্য এবং অবস্থান করার জন্য ব্যাকুল থাকে। স্বামী মনে করবে এটা তার জন্য এক আরাম ও নিরাপদ স্থান। স্ত্রীর সাথে সৌজন্য মূলক ও মধুর ব্যবহার করা স্বামীর কর্তব্য। নচেৎ এর কারণেই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ভাল ব্যবহার দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সুখকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উত্তম ব্যবহার মানুষের মধ্যকার সকল বিরোধকে হ্রাস করে দেয়। কোনো কোনো স্বামী নিজেকে প্রভূ আর স্ত্রীকে ভৃত্য মনে করে আবার কেউ কেউ নিজেকে রাজা, স্ত্রীকে প্রজা ভাবার ফলে তাদের প্রতি খারাপ আচরণ করে থাকে। কারো কারো চিন্তা চেতনা এর চেয়েও কুৎসিত। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংসারে কলহ দেখা দেয় এবং সংসারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
দাম্পত্য সুখ শান্তি অনেকটা নির্ভর করে ত্যাগের মানসিকতার উপর। একেক জনের সমান ত্যাগ সংসারকে ভয়াবহ অনাকাঙ্খিত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারে। এজন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়কে ত্যাগ স্বীকারে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই দাম্পত্য জীবন শুরু করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে অনেকাংশ বিরোধ মিটে যায়। তখন ভুল কিছু হলেও কেউ কাউকে দোষারোপ করার কিছু থাকে না। স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে জানা অজানা নানা বিষয় নিয়ে মত দ্বৈততার সৃষ্টি হয়। এর একটি হলো অনুমান নির্ভর। স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপারে এবং স্ত্রী তার স্বামীর ব্যাপারে ধারণা করে অনেক সময় নানা কথা বলে বসে । যা অনেক সময় অবাস্তব প্রমাণিত হয়। এর ফলে পরিবারের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এজন্য নিশ্চিত না হয়ে কারোর ব্যাপারে অনুমান নির্ভর কথা না বলা উচিত।

 বিবাহিত জীবনে সুখে থাকার উপায় 

সমাজে নারী ও পূরুষ এক নয় এবং এক হতেও পারে না। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা স্বভাব, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র। স্বামী-স্ত্রী পরিবারে এক অন্যের পরিপূরক। তেমনি ভাবে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য এক নয় এবং এক মনে করা ঠিক নয়। বরং এক মনে করাটা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। স্বামীর দায়িত্ব হচ্ছে পিতৃত্বের ভূমিকা পালন করা, পরিবারের, স্ত্রী, পুত্র, ছেলে সন্তান ও অন্যান্য সদস্যদের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে মাতৃত্বের ভূমিকা পালন করা, সন্তান লালন-পালন ও যথাযথ শান্তি, নিরাপত্তা ও পরিবারের পরিচর্যার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি যদি স্ত্রীর অতিরিক্ত সময় থাকে, তাহলে তিনি ইচ্ছা করলে যে কোনো চাকরি করতে পারেন। অতএব, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব এক মনে করার মানেই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এ ব্যাপারে সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সংঘর্ষ নিরসনে বুদ্ধিজীবী, গবেষক ও চিন্তাবিদগণ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে কিভাবে উত্তম পন্থায় পারিবারিক সংঘর্ষ নিরসন করা যায়।

বিবাহিত জীবনে সুখে থাকার উপায়

জীবনকে একটি গন্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা উচিৎ নয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি ভাল সম্পর্ক রাখা উচিত। স্বামী – স্ত্রীর ঝগড়ার ফলে ইহার প্রভাব পড়ে তাদের ছেলে – মেয়ে এবং অন্যান্যদের উপর। যার ফলে তাদের সন্তানেরা বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে এবং তারা বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। তার ফলে ওই পরিবারটা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। তাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত রাখার বড় একটা মাধ্যম ধৈর্য্য। দাম্পত্য জীবনে স্বামী – স্ত্রীর মাঝে যখনই কোনো প্রকার ঝগড়া বিবাদ বা মন-মালিন্য দেখা দেবে, তখন প্রত্যেকে যেন একে অপরের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে সহ্য শক্তি সুরক্ষা করে, অপরের কোনো কিছু অপছন্দনীয় হলে সে যেন দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য্য রক্ষার উদ্দেশ্যে অকপটে বরদাস্ত করতে চেষ্টা করে। কেননা এ কথা সর্বজন বিদিত যে স্বামী ও স্ত্রীর স্বভাব ও প্রকৃতি, মন, মেজাজ ও ব্যবহার ইত্যাদি দিক দিয়ে পূর্ণমাত্রায় সমান হতে পারে না। এটা সৃষ্টি রহস্যও বটে। কাজেই অপরের অসহনীয় ব্যাপার সহ্য করে নেয়ার জন্য নিজের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করা কর্তব্য।
অতএব, শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা, শিষ্টাচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক, পারিবারিক ভালবাসা, স্নেহ-মমতা, দয়া, অনুগ্রহ এবং নিরাপত্তা ইত্যাদি পূর্ব শর্ত। বাবা-মায়ের বা পরিবারের সুসম্পর্ক ভালবাসা ইত্যাদি শিশুদের হৃদয়ে ভালবাসা, শ্রদ্ধা, শান্তি, নিরাপত্তা ও আনুগত্যের প্রবণতার জন্ম দেয়। শিশুরা সর্বাবস্থায় তাদের বাবা-মা ও পরিবারের ডাকে সাড়া দেয়, তারা তাদের আনুগত্য স্বীকার করে, তাদের কল্যাণকর বিষয়গুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। বাবা-মায়ের সঠিক ভালবাসা আর স্নেহ-মমতার মাধ্যমে শিশুদের অন্তর থেকে অহেতুক ভয় – ভীতি আর নেতিবাচক প্রভাব দূরীভূত হয়ে যায়। তারা নিজেদেরকে আত্মিক ও মানসিক ভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারে।
আজকাল স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার কারণে সন্তান-সন্তুতিরা বিপদগামী হয়। তাদের সন্তানরা মাদকাসক্ত হচ্ছে, বাজে লোকদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে এবং আরো অজানা খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আর স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার কারণে তাদের সন্তান- সন্তুতির উপর এর প্রভাব পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর সংঘর্ষ নিরসনের মাধ্যমেই সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। নিম্নের বিষয়গুলি যদি তারা অনুসরণ করে তাহলে পরিবারের সুখ আসবে। যেমন, সুখ-দুঃখকে ভাগাভাগি করে নেওয়া, একে অন্যের পরিপূরক মনে করা, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখা, লজ্জ্বা, আত্মসমালোচনা ও আত্মবিচার, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, নিষ্ঠা, সরলতা দায়িত্বানুভূতি নিজেদের সমস্যা যথা সম্ভব নিজেরাই নিষ্পত্তি করা, কুপ্রবৃত্তির দমন ও সুপ্রবৃত্তির লালন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও কাজের প্রতি মূল্যায়ন ইত্যাদি।









বিবাহিত জীবনে সুখে থাকার উপায়
কথায় বলে—পুরুষ মানুষ দুই প্রকার। জীবিত আর বিবাহিত। সত্যিই কি বিয়ের পর পুরুষের সুখ চলে যায়? তাঁদের মন বিষিয়ে ওঠে? কিন্তু উপায় কী। হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞরা বের করেছেন, বিবাহিত কিংবা দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখে থাকা যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ‘সম্পর্ক’ বিশেষজ্ঞ টি তাশিরো বলেছেন, আপনি যদি অসাধারণ কাউকে পেতে চান, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে।
তাশিরো তাঁর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যদি একটি ঘরের মধ্যে মধ্যম মান, আয়, চেহারা ও উচ্চতার ১০০ জন পুরুষ থাকেন, তাহলে সেখানে মাত্র ১৩ জন বিবাহযোগ্য পুরুষ পাওয়া যাবে। আর যদি কেউ ওই ১০০ জনের মধ্য থেকে আকর্ষণীয়, ছয় ফুট লম্বা কিংবা ৮৭ হাজার ডলার আয় করা কোনো পুরুষকে খোঁজেন, তাহলে মাত্র একজন পুরুষের দেখা মিলবে। আর কৌতুকবোধসম্পন্ন, দয়ালু, এমনকি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন পুরুষের সন্ধান করা হয়, তাহলে ১০০ জন পুরুষের মধ্যে একজনই পাওয়া অসম্ভব। ভড়কে গেলেন। ভাবছেন কাকে নিয়ে সংসার সাজাবেন? বিবাহিত জীবনে সুখে থাকবেন কীভাবে?
তাশিরোর যুক্তি হলো—টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য বিবাহিত জীবনকে সুখী করতে পারে না। অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তাঁর মতে, একটি ভালোবাসাময় সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে যে গুণটি থাকা প্রয়োজন, তা হলো—আন্তরিকতা। আন্তরিক বলতে তিনি এমন কাউকে বুঝিয়েছেন, যিনি হবেন বিনীত, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্য, ভালো স্বভাব, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল।অন্য আরেক দল গবেষক মনে করে, ভালোবাসাই একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে হূদয়ের অটুট বন্ধন তৈরি করে দেয়। তৈরি করে সাংসারিক বন্ধন। ভালোবাসা ব্যতীত কোনো সাংসারিক কিংবা দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন শূন্য, ফাঁকা।

একজন সুন্দর মনের ও সুন্দর গুণের স্ত্রী সংসারকে তাঁর নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন। সাজিয়ে তুলতে পারেন সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় বাগানের মতো করে। তবে এই কাজের জন্য দরকার প্রেমিক স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সুগভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা থাকলে দেখবেন, বিবাহিত জীবনে সুখ কাকে বলে! 

Comments