একটু বৃষ্টিতেই ঢাকা শহর ডুবে যাই
একটু বৃষ্টিতেই ঢাকা শহর ডুবে যাই
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা | ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি!
বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা

গতকালের দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর অন্য অনেক এলাকার মতো ডুবে যায় মতিঝিলের প্রধান সড়কও। ছবি : কালের কণ্ঠ
রাজধানীর ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে যাবেন মামুনুর রশিদ। মুষলধারে বৃষ্টিতে থইথই রাস্তায় যানবাহন কম। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর শিকড় পরিবহনের একটি বাসে উঠতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। যাত্রীতে ঠাসা বাসে কোনো রকমে দাঁড়িয়ে চলছিলেন। খামারবাড়ি, আগারগাঁও, তালতলায় থেমে থেমে চলতে চলতেই এক ঘণ্টা পার। আর তালতলা থেকে শেওড়াপাড়ায় পৌঁছে একেবারেই থেমে যায় বাস। কারণ সামনের পুরো রাস্তা পানির নিচে। যাত্রীরা যে যার মতো বাস থেকে নেমে কেউ হেঁটে, কেউ রিকশাভ্যানে, কেউ বা নৌকায় পার হলো। নানা কায়দায় কাজীপাড়া পার হয়ে শুকনা ফুটপাত পান মামুন।
দুপুরে ‘নদীপথ’ পার হয়ে এগিয়ে দেখা গেল, কাজীপাড়া থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত থইথই পানি। আটকে পড়েছে ছোট ছোট যানবাহন। সেখান থেকে মিরপুর-১০ নম্বরমুখী সড়ক প্রায় যানবাহনহীন।
বিকেল ৩টায় দেখা গেল, মৌচাক-মগবাজার উড়াল সেতুর নিচের অংশও পানিতে থইথই। মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগে রাস্তা ডুবেছে, ডুবেছে ফুটপাত। জলাবদ্ধতার এসব চিত্রের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
ঢাকায় গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত সোয়া দুই ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৯ মিলিমিটার। দুপুরের টানা বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তা ও বিভিন্ন মহল্লা যেন ভাসতে থাকে পানিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মালিবাগ, মৌচাক, মহাখালী, শান্তিনগর, ইস্কাটন, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ধানমণ্ডি, চানখাঁরপুল থেকে পুরান ঢাকার মূল সড়ক হাঁটু থেকে কোমরপানিতে তলিয়ে যায় গতকালের টানা বৃষ্টিতে। জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাগ ও নিউ মার্কেট এলাকাও ডুবে ছিল। তলিয়ে যায় অলিগলির রাস্তাও। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে নগরবাসী। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও।
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল গতকাল। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেনি। আবার অনেকে ফেরার পথে নির্দিষ্ট সময়ের ট্রেন ধরতে পারেনি জলাবদ্ধতায় আটকে পড়ে।
কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফিন্যান্সের অডিটর পদে পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল কল্যাণপুরে। সেখান থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে দেখি ট্রেন ছেড়ে গেছে!’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘বৃষ্টিতে শান্তিনগর ও মালিবাগ এলাকায় অনেক গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।’ ধানমণ্ডি-১৪ এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিকেল পর্যন্ত পানি ছিল আমার এলাকায়।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ গুলিস্তানের বিভিন্ন রাস্তায় পানির তোড়ে অটোরিকশা চলাচল কমে যায়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত জলাবদ্ধতা বেশি ছিল। শান্তিনগরে পাদানি ডুবিয়ে রিকশা চলতে পারলেও অটোরিকশা চলতে গিয়ে বন্ধ হয়ে পড়েছে স্থানে স্থানে।
মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেল প্রকল্পের জন্য রাস্তার মধ্যাংশ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকেল ৪টায় মিরপুর-১০ নম্বর মোড়ে গণপরিবহনের অপেক্ষায় ছিল অসংখ্য যাত্রী। অপেক্ষমাণদের একজন সামসুদ্দিন বললেন, ‘রিকশায় মিরপুর-২ নম্বর ও ৬০ ফুট হয়ে আগারগাঁও যেতে চাইছি। রিকশাচালকরা ১৫০ টাকা চাইছে। শেষে কিছু না পেলে হেঁটে যাব। কারণ বাসে গেলে আটকে পড়তে হবে কাজীপাড়ায়।’ রাজাবাজার, কালশীতেও রাস্তা ডুবে ছিল।
বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার ফলে প্রায় ৬০ শতাংশ বাসই বন্ধ ছিল। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ অটোরিকশা বন্ধ ছিল বিভিন্ন গ্যারেজে। ঢাকার প্রধান প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর, আবদুল্লাহপুর-বনানী-মহাখালীর বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতায় গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা শহরের চারপাশে ওয়াসার আটটি পানির পাম্প রয়েছে। এগুলো চালু করলে মূল শহরের পানি একটু দ্রুত নেমে যেতে পারে। তবে এবার পানি নামার গতি দেখে মনে হয়েছে, সেগুলো চালু করা হয়নি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়্যারলেস ফোনে সারা দিন পাঁচটি অঞ্চলের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা নিয়েছি মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য। কালশী এলাকায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। জলাবদ্ধতা কমাতে ঢাকা ওয়াসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’
Comments