কনেযাত্রী নিয়ে বরের বাড়ি বিয়ে করতে গেলেন পাত্রী, ভিডিও ভাইরাল


বিয়েটা কোনও প্রথাগত বিয়ে নয়। দীর্ঘ দিনের রীতি ভেঙ্গে কনে বরকে বিয়ে করতে যাওয়ায় চলছে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনা। কেউ সাধুবাদ জানাচ্ছেন কেউ আবার উপহাসও করছেন। তবে যারা রীতি ভেঙ্গে বিয়ে করেছেন তারা বলছেন, এখন আমরা বিয়েটা খুব উপভোগ করছি। সচরাচর প্রথা ভেঙ্গে ব্যতিক্রমী কিছু হলে সমালাচনাতো হবেই।
গত শনিবার কনে বরকে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর রোববার কনের চুয়াডঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের বাড়িতে বরভাত অনুষ্ঠান হয়েছে। বরভাত অনুষ্ঠান শেষে বর তরিকুল ইসলাম জয় তার নববধুকে সঙ্গে নিয়ে রাতে গাংনীর চৌগাছার বাড়িতে যান। বর জয় তার নববধুকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই বসবাস করবেন।
কনে বাড়ি থেকে ফিরে ব্যবসায়ী বর তরিকুল ইসলাম জয় বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের তেমন কোনও প্রধান্য দেওয়া হয় না। মেয়েদের আটকিয়ে রাখার আর সময় নেই। নারী ও পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য সেই বৈষম্য দুর করার জন্যই আমাদের এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন। বিয়েতে অনেক মজা হয়েছে, অনেক আনন্দ হয়েছে। এখন বিয়ে পরবর্তী জীবনটা আমরা যেন সুখে আনন্দে একে অপরের হতে হাত রেখে চলতে পারি সেই দোয়া চাই।
কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, একটি মেয়ে হিসেবে আমি একটি ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে যাব এমন ভাবনা আমার কখনও কল্পনাতেও ছিল না। সমাজে বলা হয় নারী পুরুষ সমান অধিকার। কিন্তু নারীদের সে অধিকার কখনও দেওয়া হয় না। আমরাই প্রথম এই সিস্টেম চালু করলাম। নারী-পুরুষের সমান অধিকার বিষয়টি যারা মানতে পারছেন না তারা নানা রকম সমালোচনা করছেন। আশা করছি এমন সিস্টেম চালু হলে আর কেউ সমালোচনা করবে না। ঘটনাটি প্রথম বিধায় নানা সমালোচনা হচ্ছে। বিয়ের পর এখন খুব ভাল লাগছে।
বরের পিতা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি। এটা সবে মাত্র শুরু। আস্তে আস্তে দেখবেন এমন আয়োজন অনেকেই করছে। তখন আর মানুষে কিছু বলবে না।
কনের পিতা কামরুজ্জামান বলেন, মেয়ের ইচ্ছেতেই আমাদের এমন বিয়েতে রাজি হওয়া। বিয়ের পর সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে দেখতে আসছে। এতে ভালা লাগা মন্দ লাগা দুটোই কাজ করছে। তবে তিনি মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য সবার নিকট দোয়া কামনা করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, বিয়ে এখন লঞ্চে, বিমানে, হেলিকপ্টারে, বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে হচ্ছে। এটা আমাদের দেশে নতুন। পৃথিবীর অনেক দেশেই নতুনত্বের স্বাধ নিতে বিয়েতে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন করে থাকেন। আমাদের দেশে এক রকম প্রথা চলে আসাই বিষয়টি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, ব্যতিক্রমী বিয়ের ঘটনাটি আমি সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি। বর কনের উভয় পরিবার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে উভয় পরিবারকে কোনও না কোনও বিষয়ে ছাড় দিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে এমন ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করতে পেরেছেন।      
প্রসঙ্গত, গেল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি তার পরিবারসহ কনে যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের  কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে বর তরিকুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে। ঘটনা শুনে বরের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতে থাকে। দুপুরে কনে যথারীতি বরের বাড়িতে সাতটি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল সহকারে ৬০ জন কনে যাত্রী নিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। বিয়ের নিয়মে কোনও ঘাটতি ছিল না। প্রথা অনুয়ায়ী প্যান্ডেল, গেটসহ ভুঁড়ি ভোজের সব আয়োজন করেন বর পক্ষের লোকজন। গেটে ফিতা কিটে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন কনে। সেই সময় বরের মত করে কনেকে মিষ্টি মুখও করানো হয়। বিয়েতে বরযাত্রীর স্থলে সাজানো প্যান্ডেলে ভুঁরিভোজ করেন কনে যাত্রীরা। শেষে বর-কনে বিয়ে সম্পন্ন হলে বরকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন কনে।
ভিডিও দেখুন...

কনেযাত্রার’ পর এবার হলো ‘বরভাত’ (ভিডিও)



যে কারণে প্রথা ভেঙে বিয়ে করলেন চুয়াডাঙ্গার সেই কনে
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
ছেলের বাড়িতে গিয়ে চিরাচরিত নিয়ম ও প্রথা ভেঙে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করে বরকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসেন চুয়াডাঙ্গার এক কনে। কনের পিতার বাড়িতে শনিবার রাতে সাজানো হয় বাসরঘর। রোববার আবার কনের পিতার বাড়িতেই ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয় বরভাত অনুষ্ঠান।
বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী চিরাচরিত প্রথা ও নিয়ম ভেঙে শনিবার দুপুরে শতাধিক কনেযাত্রী নিয়ে মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার চৌগাছা গ্রামে বিয়ে করতে যান পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী তিনি।
তার এই বিয়ে নিয়ে কেউ হাসিঠাট্টা করলেও অনেকে একে নতুন একটি কালচার, নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিকতার ‌উপরেও একটা প্রভাব ফেলতে পারবে নতুন এ বিয়ে প্রথা।
চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এমন বিয়ে করাতে উচ্ছ্বসিত কনে খাদিজা আক্তার খুশি। তিনি বলেন, আমার এ বিয়ে হচ্ছে নতুন স্টাইলে। নারী-পুরুষের সমান অধিকার বলা হয়। কিন্তু কখনো এটা দেয়া হয়নি। একটা ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিচ্ছে। কিন্তু এখানে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে একদম নতুন স্টাইলে। এটা আমার অনেক ভালো লাগছে। আমার থেকেই শুরু হোক এ অধিকারের প্রশ্ন। আমি আশা করছি, সবাই এই নিয়মটা পালন করবে।
অন্যদিকে বর ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জয়ও বেশ আনন্দিত এমন বিয়ে অনুষ্ঠানে। তার ভাষ্য, এই বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বরের বাবা আবদুল মাবুদ বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে যে রীতি চালু হয়ে এসেছে সেটাকে ভেঙে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা উচিত। নারী-পুরুষের মাঝে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে সে জন্য চিরাচরিত রীতির বাইরে গিয়ে এভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।
কনের বাবা কামরুজ্জামান বলেন, ছেলেমেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি

কনেযাত্রী নিয়ে বরের বাড়ি বিয়ে করতে গেলেন পাত্রী, ভিডিও ভাইরাল

 জাঁকজমকে পরিপূর্ণ বিয়ে বাড়ি। চলছে রান্নাবান্না আর সঙ্গে অতিথিদের অভ্যর্থনা। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে অজস্র মানুষ। উৎসুক দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে রয়েছেন কখন আসবে কনে ও কনেযাত্রীরা। অবশেষে ৩০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে কনে এসে নামলেন বরের বাড়ির গেটের সামনে। প্রথানুযায়ী মিষ্টিমুখ করিয়ে কনেকে বরণ করে নিলেন বরপক্ষ। এরপর শুরু হলো বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের পর বর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন এবং কনে যাত্রীদের ভুরিভোজ করানো হল। বিকেলে বরকে নিয়ে কনে চলে গেলেন বাবার বাড়িতে।
বিয়ে করতে মেয়ের বাড়িতে বর আসবে এটাই স্বাভাবিক রীতিনীতি। কিন্তু এবার আর বর গেলেন না কনের বাড়িতে, বিয়ে করতে বরের বাড়িতে চলে এলেন কনে নিজেই।  এই পুরো ঘটনার সাক্ষী থাকলো মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রাম। মূলত যৌতুকমুক্ত বিয়ে ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থেই বিয়ের এই নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে দুই বাড়ির পক্ষ থেকে। বেশ আড়ম্বরের সাথেই আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান।
ব্যতিক্রমী এই বিয়েটি হয়েছে বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গার হাজারহাট গ্রামে। কনে খাদিজা আক্তার খুশী তার পরিবার ও সহযাত্রীদের নিয়ে বিয়ে করতে আসেন তারিকুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে। সমাজের একাংশ এই বিয়েকে সুনজরে না দেখলেও খুশী এই সব নিয়ে ভাবতে রাজি নয়।
তার স্পষ্ট জবাব, “আমার বিয়েটা হল নতুন স্টাইলে। একটা মেয়ে এবার একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষের সমান অধিকারের এটা একটা দারুন উদাহরণ।”
বর ও কনের উভয় পক্ষের বাবা মেয়ে ও ছেলের এমন সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন। উনারা মনে করছেন হয়তো এই বিয়ে দেখে অন্য মেয়েরা উদ্বুদ্ধ হবে। নতুন প্রথা চালু হবে। বিয়ে প্রসঙ্গে কনের বাবা কামরুজ্জামান বলেন, “ছেলেমেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা অভিভাবকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে এনে বিয়ের আয়োজন করি। খুশির এই প্রথা ভাঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশে বিস্তর চর্চা চলছে। অনেকেই খুশীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আবার অনেকেই সমালোচনার তীর ছুঁড়ে দিয়েছেন খুশির দিকে।”
এই ঘটনার থেকে এটাও প্রমানিত হয় যে মেয়েরাও পারে। মেয়েরা আজ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

Comments