Hotline Comando | হটলাইন কমান্ড | Ep- 01| (স্ক্রিন আসক্তি) | Tanzim Ahme...







সচেতন আর অসচেতনভাবেই হোক,আমরা সবাই স্ক্রিন আসক্তিতে আসক্ত।মুঠোফোন, ট্যাবলেট বা টিভি স্ক্রিন কেড়ে নিচ্ছে আমাদের জীবনের সহজ ছন্দ। আপনার অভিজ্ঞতা কি? আপনার জানামতে এমন কি কোন বেক্তি বা পরিবার আছে যিনি বা যারা এক ঘোর অন্ধকারে ডুবে আছেন অথবা অনেক যুদ্ধ করে যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন? আমাদের ইনবক্স করুন আপনার অভিজ্ঞতা।আসছে সোহেল তাজ এর উপস্থাপনায় টিভি রিয়েলিটি শো"HOTLINE COMMANDO". আপনার অভিজ্ঞতা হয়তো অন্যকে আশা কিংবা সচেতন করবে?




সোহেল তাজ ও হটলাইন কমান্ডো কিংবা সমস্যা সমাধানের মিশন!


দেখছিলাম হটলাইন কমান্ডো। সোহেল তাজের উপস্থাপনায় প্রথম পর্ব দেখে এতো উল্লসিত হলাম! গোটা অনুষ্ঠান গতানুগতিক ধারার বাইরে, স্টোরি টেলিংয়ের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে পর্বটি। সমস্যা শুধু দেখানো হয়নি, দেখানো হয়েছে সমাধানও। বর্তমানে ভয়ংকরভাবে স্ক্রিন আসক্তি – ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদি স্ক্রিনের প্রতি শিশুরা যেভাবে আসক্ত, তার প্রতিকার নিয়ে প্রথম পর্ব নির্মিত হয়েছে।
প্রথম পর্বটা আমি খুব ভালো ভাবে রিলেট করতে পেরেছি ভিন্ন এক কারণে। আমি স্মার্টফোনে আসক্তির বিরুদ্ধে। আমি প্রায়ই বলি, মানুষ এখন যে জীবনটা পকেটে নিয়ে ঘুরে, এ বড় হতাশার জীবন। এই নোটিফিকেশনের জীবন বড্ড অস্থিরতাময়।
Sohel Taj, সোহেল তাজ
আর সবচেয়ে রাগ লাগে যখন দেখি, অল্প বয়সী শিশুর হাতে বাবা মায়েরা ফোন তুলে দেন। টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখেন ঘন্টার পর ঘন্টা। আবার খুব আহ্লাদ করে বলেন, আমি মোবাইলের অত কিছু না বুঝলেও আমার বাচ্চাটা মোবাইল ফোনের ওস্তাদ। সব কিছু বুঝে…
কি অদ্ভুত এক যুগে আমরা এখন বসবাস করি ভাবলে মাঝে মধ্যে কষ্ট লাগে। সবার হাতে এখন স্মার্টফোন। এই ফোন যতটা মানুষ যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করে, তারচেয়ে বেশি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্যে।
ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনের স্ক্রিন আমাদের দুনিয়া ঘুরিয়ে নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু আমাদের কোনো উন্নয়ন হয় না। আমরা বরং আরো হতাশ হয়ে পড়ি, আমাদের মধ্যেই হিংসা জন্ম নেয়, কষ্ট জন্ম নেয়, নিজেকে অর্থব মনে হয়, অসাড় মনে হয়। মানুষের নকলতম সংস্করণ এখন ছড়িয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবাই নিজেকে দেখাতে ব্যস্ত, কিন্তু নিজের অন্তঃসারশূন্যতার কথা কেবল অফলাইনে মানুষ উপলব্ধি করে।
কন্টেন্ট হিসেবে হেট স্পিচ এখন অনলাইনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ফেসবুকে অন্ধ সমালোচনা, হেটস্পিচের ছড়াছড়ি আর ইউটিউবে রিয়েকশন ভিডিও, রোস্টিং, বাস্টিং। সত্যি বলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবন বদলে দেয়া লেখা, অসাধারণ মন ছুঁয়ে যাওয়া কন্টেন্ট কদাচিৎ মেলে। তবুও, আমরা ব্রাউজ করতেই থাকি। হারিয়ে যাই অনলাইনের বিশাল দুনিয়ায়।
শুধু নিজেরা হারাই, তাই নয়। এখন আমাদের টিন এজার কিংবা শিশুদের হাতেও স্মার্টফোন। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে বসে গেমস খেলা, ভিডিও দেখা – এই অভ্যাস দাঁড়িয়ে গেছে। এই স্ক্রিনের মধ্যে তাকিয়ে থাকা এক ধরনের আসক্তি। এই আসক্তি যেকোনো নেশার মতোই ক্ষতিকারক। তবুও যেন নিস্তার নেই। সবাই এই নেশায় বুঁদ।
সুকুমার রায়
কদিন আগে আমি সুকুমার রায়ের বই পড়ছিলাম।
এত বছর পর এসে শৈশবের সুকুমার রায়কে রিভিশন দিলে যে আবার এতোটা আনন্দ লাগবে এটা কেন আগে বুঝিনি! এখন ছোটদের হাতে কে তুলে দিবে সুকুমার রায়ের বই?
বইটা পড়তে পড়তে আমার কাছে মনে হলো, ইউটিউব, গুগলে পরেও আসক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু, যে বয়সে কল্পনাশক্তি সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হওয়ার সময়, সেই বয়সে মোবাইলের আগে বাচ্চাকে সুকুমার রায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া ভাল। আমরা কিভাবে বড় হয়েছি! লোককথা, রুপকথা দাদী নানীদের মুখে শুনেছি তা শুনে কল্পনা করেছি। ছোটবেলায় যখন মনের আনন্দে আমরা ছবি আঁকতাম, সূর্য আঁকতাম নীল রঙয়ের। কারণ কল্পনায় সব কিছুই সম্বব।
আজকাল কল্পনা করতে দেবে না কেউ, ইউটিউবে সব পাওয়া যায়। গুগলে সব পাওয়া যায়। কিন্তু, সেল্ফ ইমাজিনেশনটাও খুব দরকার। সুকুমার রায়কে পড়ার আনন্দটাও পাওয়া দরকার। বিবাহিত মানুষজন যারা আছেন, তারা নিজের সন্তানকে সেরা হিসেবেই দেখতে চাবেন নিশ্চিত, সবচেয়ে স্মার্ট হিসেবেই দেখতে চাবেন, জানি। অনেক পরিকল্পনা করে ফেলেছেন হয়ত কিভাবে মানুষ করবেন তাদের।
আপনার পরিকল্পনায় বইকে রাখুন। অন্তত গ্যাজেটের আগে বইকে প্রায়োরিটি দিন। বাচ্চাটা বই পড়তে পারে, অদ্ভুত প্রশ্ন করতে শিখেছে, কৌতুহলী মন, গল্প শুনতে চায়? ব্যাস, অনেকটুকু নিশ্চিত থাকুন, সে বাকি নয়জনের চেয়ে একটু হলেও বেশি বুদ্ধিমান, সেন্সিবল হতে যাচ্ছে! কিপ ইনকারেজিং দেম!
কিন্তু, শিশুকে স্মার্টফোনে আসক্ত করা থেকে বিরত করার জন্যে যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া উচিত ছিল, তার দায়িত্ব কে নেবে? এরকম সামাজিক জটিল সমস্যা নিয়ে কথা বলার দায়িত্ব এমন কাউকে নিতে হতো, যিনি কথা বললে তার গুরুত্ব মানুষ বুঝবে। যিনি বললে, মানুষ একটু তলিয়ে দেখতে চাইবে, বুঝবে তার দোষ কোথায়, সমাধান কোথায়।
সোহেল তাজ, হটলাইন কমান্ডো
সম্ভবত সবচেয়ে যোগ্য এবং আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকেই আমরা এই কাজটি করতে দেখলাম। সোহেল তাজ রাজনীতির মাঠে নেই। নিজের আত্মমর্যাদা ধরে রেখে নিজেকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু, তিনি কিছু করবেন, মানুষের কথা বলবেন এরকম প্রত্যাশার চাপ সবসময় ছিল। তিনি রাজনীতিতে না এসেও জনমানসের সেবা করার, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ভিন্ন এক পথ বেছে নিয়েছেন। হটলাইন কমান্ডো নামে একটি প্রোগ্রামে তিনি মূল ভূমিকায় অংশ নিচ্ছেন। যে প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিনি শুধু অসঙ্গতি নয়, সমাধান নিয়েও কথা বলতে চান।
সেই হটলাইন কমান্ডো প্রোগ্রামটির প্রথম পর্ব দেখার সুযোগ হয়েছিল গতকাল। এমন অসাধারণ প্রোগ্রাম অনেকদিন বোধহয় দেখিনি। অনুষ্ঠানের শুরুটাতে দেখানো হলো সমস্যা কি। লুব্ধক নামে এক শিশু টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনে আসক্ত। তাদের বাবা মা ফোন করলেন হটলাইন কমান্ডোতে। সোহেল তাজ গেলেন লুব্ধকের বাসায়। কথা বললেন, সমস্যাটার গভীরে গিয়ে বুঝতে চাইলেন। তারপর প্রাথমিকভাবে সমাধান দিলেন। এই সমাধান খোঁজার পরে ফলাফল কি হলো, পরিবর্তন কতটুকু হলো, তা জানতে ফলো আপ করা হলো।
এর মাঝে বিশেষজ্ঞরা জানালেন, স্ক্রিন আসক্তি কি? এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ। একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ১৫০ বার ফোন আনলক করে, কাজ না থাকলেও অভ্যাসের কারণে সে এই কাজ করে অনেক সময়। অথচ, সে দিনে হাসে মাত্র ১৫ বার গড়ে। বলা হয়েছে, শিশুরা স্মার্টফোনে আসক্ত হলে, একসময় বাস্তব জীবনে মানুষকে সে অত মূল্যায়ন করে না, বাবা মার প্রতিও ভালবাসা আলগা হয়ে পড়ে তার, মেজাজ খিটমিট হয়ে যায়। তার জগত হয় স্মার্টফোন কেন্দ্রিক। এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান খুঁজতে চেয়েছেন সোহেল তাজ।
এমন একটি আয়োজন হোক, এই আশা আমি ব্যক্তিগতভাবে কামনা করেছি বহুদিন ধরে। সোহেল তাজের হাত ধরে এমন উদ্যোগ ঘটায় আমি কতটা খুশি হয়েছি তা বোঝানো কঠিন। সারাক্ষণ সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আর শুনতে, হেটস্পিচ দেখতে ভাল লাগে কতক্ষণ! সমাধানের কথাও আসুক। সোহেল তাজ হটলাইন কমান্ডোতে সেই সমাধানের কথা বলতেই এসেছেন।
সোহেল তাজ, হটলাইন কমান্ডো
সোহেল তাজ প্রমাণ করলেন, মানুষের ভাল চাইলে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে, কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চাইলে রাজনীতিবিদই হতে হবে এমন নয়, যেকোনো অবস্থাতেই করা যায় যদি উদ্দেশ্য ভালো থাকে। তার জন্যে ক্ষমতা, গদি কিছু লাগে না। ধন্যবাদ নেতা, ধন্যবাদ সোহেল তাজ দ্য কমান্ডো। এমন একজন কমান্ডোর বড় অভাব ছিল এতোকাল…


Comments