ঘরে বাইরে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে যেভাবে







ক্লিক করুন দেখুন মেজিক





পুরুষ নির্যাতন বন্ধ হোক ঘর থেকে...
 
নারী নির্যাতনের খবর ফলাও করে প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও পুরুষ নির্যাতনের কথা সেভাবে আসে না। অনেক পুরুষই শারীরিক, মানসিক, দৈহিক, আর্থিক ও  সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে এ ধররের নির্যাতন প্রায়ই ঘটছে। তবে তুলনামূলকভাবে নারীদের চেয়ে পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা কম।
 
পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন নামের একটি সংগঠন বলছে, সমাজে অনেক পুরুষই বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন কিন্তু দেখার কেউ নাই।
 
ভুক্তভোগী পুরুষরা জানিয়েছেন, অহেতুক কোনো কিছু ঘটলেই যৌতুকের মামলা দেয়া হয়। চরম হয়রানির শিকার হন পুরুষরা। টানতে হয় জেলের ঘানি। 
 
পুরুষ নির্যাতন বন্ধে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব সিহমা হুদা ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ডিসি ফরিদা ইয়াসমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানিয়েছেন। 
 
ডিসি ফরিদা ইয়ামনি জানান, শুধু নারীরাই নন, পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক পুরুষ খারাপ মেয়েদের ট্যাপে পড়ে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। 
 
ডিসি ফরিদা ইয়ামিন বলেন, অনেক ভদ্রলোক (এমপি, মন্ত্রী) মেয়েদের ট্যাপে পড়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ শুধু নারীরাই নন, পুরুষরাও নারীদের দ্বারাও ভিকটিমাইজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছু গোপন রেখে কাউন্সিলিং ও আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকি। এটি পেশাগত দায়িত্বের বাইরে।
 
ফরিদা বলেন, পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন। এর সঙ্গে যৌতুকের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু দাম্পত্য কলহ হলেই যৌতুকের মামলা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সন্তানও কিন্তু দিশেহারা হয়ে যায়। পারিবারিক মামলা শুধু পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না। এক্ষেত্রে পরিবারে লোকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা নারীদের তুলনায় অনেক কম। নারীদের নিজের পরিবারকে নিজের মধ্যে ম্যানেজ করে চলতে হবে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ভুল বোঝাবুঝি হলে নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে হবে। নির্যাতন বন্ধ হোক ঘর থেকেই।  
 
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব সিগমা হুদা বলেন, পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে- এটি সত্য-মিথ্যা দুটিই হয়। একটি মেয়ে কখনও চায় না তার সংসার ভেঙে যাক। তবে সংসার জীবনে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে সবার। আর পুরুষদের কেউ শুধু বাইরে কাজ করলেই হবে না, তাকে সংসারী হতে হবে। বউ-বাচ্চার খবর নিতে হয়। আমি মনে করি, সব প্রকার নির্যাতন বন্ধ হওয়ার মানসিকতা ঘর থেকেই শুরু হতে পারে। 
 
আগামীকাল পড়ুন-
যেভাবে বন্ধ হবে পুরুষ  নির্যাতন 

প্রসঙ্গ : পুরুষ নির্যাতন দমন আইন

নারীদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব সমাজে মাত্রা ভিন্নতায় নির্যাতন ছিল, আছে এবং আরও অনেক দিন থাকবে- সেই বিষয়ে আমারসহ অনেকেরই দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এই নারীদের হাতেই পুরুষও নির্যাতিত হয়। যদিও এর মাত্রা, ধরন, প্রেক্ষিত ভিন্ন। পাষন্ড-দুর্বৃত্ত স্বামীর হাতে স্ত্রীরা যেমন প্রহার, লাঞ্ছনা, নিগ্রহের শিকার হন তেমনি স্ত্রীর হাতে পতি নিপীড়নের দৃষ্টান্তও কম নয়। এমনই নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী অনেকের অনুরোধেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আমার এই লেখা। 
 ক্লিক করুন দেখুন মেজিক

বর্তমানে নারী নির্যাতনের পাশাপাশি বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন একটি প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির পুরুষ মানুষ আজকে কোনো না কোনো নারী দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। মানুষের জীবনে কয়েক রকমের নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, আর কেউ বা সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। পাশাপাশি হচ্ছে শাসন-শোষণের শিকার, ঘরে-বাইরে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সাম্প্রতিককালে দেশের নানা প্রান্তে স্ত্রীর অত্যাচারে বেশ কয়েকজন স্বামীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের তরুণ সম্ভাবনাময় ডাক্তার আকাশের আত্মহত্যা তারই উদাহরণ। ইদানীং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, পারিবারিক বন্ধনের অভাব এবং নারীর ক্ষমতায়নের ফলেই বেশির ভাগ নারী বিয়েকে 'দাসত্ব' মনে করছেন। ফলে ভাই-বোনসহ তৃতীয়পক্ষের ইন্ধনে স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, অতিমাত্রায় চাহিদা তৈরি করে আর্থিক চাপ প্রয়োগ, অতিরিক্ত যৌন চাহিদা, সামাজিক কর্মকান্ডের নামে ক্লাব-পার্টিতে যাতায়াত, গভীর রাতে বাসায় ফেরা, সিগারেট-ইয়াবার মতো মাদকে আসক্তি, একাধিক ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ফোনালাপ ও মেলামেশা, পর পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া, সন্তানকে অবহেলা করার মতো ঘটনাগুলো ঘটিয়ে স্ত্রীরা নির্যাতন করছেন পুরুষদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোক-লজ্জার ভয়ে এবং সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পুরুষরা স্ত্রীর অনেক অন্যায় দাবি মেনে নিলেও সমাজে পুরুষ নির্যাতন কিন্তু কমেনি। বর্তমান সময়ে যেভাবে সমাজে নারী ও শিশু আইনে মামলা করে জেল খাটানোর ভয় দেখিয়ে পুরুষ নির্যাতন করার পাশাপাশি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ডিভোর্স প্রদানের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। 
 ক্লিক করুন দেখুন মেজিক
এক সময় নারীকে অবহেলিত মনে করা হলেও বর্তমানে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দাবি তুলে নারীরা নিজেদের নানা রকম অন্যায় কর্মকান্ডকে বৈধ বানাতে আইনের অপব্যবহার করে চলেছেন। এ দেশে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইবু্যনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য একটিও নেই। ফলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়াটা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উলেস্নখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এই আইনগুলোকে কিছু নারী-পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা আর চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে নেই। এ অবস্থায় এগিয়ে যাওয়া এই নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলেও পুরুষদের জন্য বিশেষ আইন করতে বাধা কোথায়? নারী নির্যাতনের মতো পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়ন করে নারী-পুরুষদের মধ্যে সত্যিকারের বৈষম্যতা দূর করতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। নির্যাতন যাদের ওপরই হোক না কেন, তা সমাজ কিংবা ব্যক্তিজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ।

পুরুষ নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন


পুরুষ নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
পুরুষ নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত
নির্যাতন ও যৌতুকের মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঘরে-বাইরে পুরুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই পুরুষ নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএমআরএফ)।
আজ ৩ ফেব্রুয়ারি পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান নেতারা।
সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুর আলম বলেন, নির্যাতন ও যৌতুকের মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঘরে-বাইরে পুরুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে। পুরুষদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেয়ার মতো আইন না থাকায় দিন দিন পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে।
৩ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পুরুষরা ঘরে ও বাইরে নির্যাতনের শিকার হলেও আত্মসম্মানের ভয়ে কিছু প্রকাশ করতে পারেন না। আবার নারী নির্যাতনের ন্যায় পুরুষ নির্যাতন আইন না থাকায় নিজের সুরক্ষায় আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না। আর এ সুযোগটিই ব্যবহার করছেন নারীরা।
নারী নির্যাতনের বিরোধিতা করে সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা পুরুষ নির্যাতন বন্ধের দাবি তুলছি, এর মানে এই নয় যে, আমরা নারী নির্যাতনকে সমর্থন করি। তবে পরকীয়াজনিত কারণ ও অবাধ্য স্ত্রীকে শাসন করতে গেলেই স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব স্ত্রী মিথ্যা নির্যাতন এবং যৌতুকের মামলা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরকীয়া বন্ধে দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারার সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তা হলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবে, যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ড।
মানববন্ধনে বক্তারা চট্টগ্রামে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী স্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ডিভোর্সের পর কেন যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানান নেতারা।


Comments