মুভি রিভিউ: জং ধরা সম্পর্কে উঁকি দেয় ‘সাঁঝবাতি’

Sanjhbati

‘সাঁঝবাতি’ অনুভূতির গল্প। ছবি: সংগৃহীত।
একবিংশ শতকে বিশ্বায়নের যুগে, পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি যখন লুপ্তপ্রায়, জং ধরেছে পারিবারিক সম্পর্কে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই জং ধরা সম্পর্কগুলোতেই উঁকি দেয় ‘সাঁঝবাতি’, পরখ করে নেয় ক্ষয়িষ্ণু সমীকরণ। একান্নবর্তী থেকে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে বিবর্তনের পথ পেরিয়ে, শহরের ভিটেমাটিগুলোয় এখন এক অথবা দুই জন সদস্য— যে বিবর্তনের প্রতি বাঁকে জুড়ে আছে একাধিক শিকড় হারানোর গল্প। এই গল্পের এক দিকে রয়েছে দেশ ছাড়া, বিদেশে প্রতিষ্ঠা, আর্থিক সুখসমৃদ্ধি আর অন্য দিকে রয়েছে এক দূরত্বের কান্না, যে দূরত্ব ভৌগোলিক ও মানসিক উভয়ত। ‘সাঁঝবাতি’, এই গল্পের দ্বিতীয় দিক। শহুরে ফ্রেমের এক একটা মানুষ, এ ভাবেই জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, একেবারে সাঁঝবেলায় এসে এক নিঃসঙ্গ বাতির মতো টিমটিম করে বেঁচে থাকে— সুলেখা আর ছানাদাদুরা এ রকম অনেক সাঁঝবাতির মধ্যে দু’টি। এই দুই বিন্দুকে ঘিরেই গল্প বুনেছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুলেখা মিত্র (লিলি চক্রবর্তী) চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধা, সল্টলেকের সাঁঝবাতি নামের বাড়িতে এক কাজের মেয়ে ফুলির (পাওলি দাম) সঙ্গে একা থাকেন। নিত্যদিনের সঙ্গী বলতে কেবল এই এক জনই তার সমস্ত ছেলেমানুষি, ঝগড়া, অভিমান, আদর ও স্নেহের দাবিদার। আর আছেন তাঁর ছানাদা (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়), তাঁর দাদার বন্ধু। এই ছানাদা আর এক বৃদ্ধ, নিজের বাড়িতেই যাঁর প্রায় নির্বাসনে দিন কাটে। সুলেখা ও ছানাদা এই বৃদ্ধবয়সে একে অন্যের প্রতিফলক, ছায়া, সুখ-দুঃখের কথা জানানোর বন্ধু।
‘সাঁঝবাতি’ আধুনিক নগর সমাজের খুব প্রাসঙ্গিক একটা সমস্যা তুলে ধরে। বিদেশে বা দেশের অন্য শহরে প্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়েদের মা-বাবার কথা, তাঁদের একাকীত্ব ও যন্ত্রণার গল্প। স্মৃতি আঁকড়ে পরে থাকা এই একাকী মানুষগুলো শেষ কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেয় শিকড়ের মায়ায়, অতীতের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এক একটা রং আগলে ধরে। কিন্তু যন্ত্রণা তো শুধু নিজের সন্তানদের প্রতি দূরত্বের নয়, নিজের সমবয়সীদের হারানোর যন্ত্রণাও তাড়া করে বেড়ায় প্রতি মুহূর্তে, এবং বেঁচে থাকে যে দু’-এক জন, তাদের জীবনটাও বৃদ্ধাবাসের মতোই। তাই মেদিনীপুর থেকে আসা চন্দন ওরফে চাঁদুকে (দেব) তার ছানাদাদু এক সময় বলেন, ‘‘এই পুরো শহরটাই একটা বৃদ্ধাবাস হয়ে যাবে।’’
এত নৈরাশ্যের মধ্যেও ‘সাঁঝবাতি’ হতাশার গল্প হয়ে যায়নি, তার কারণ, চাঁদু আর ফুলি। ফুলি নিজের গ্রাম ছেড়ে সুলেখার বাড়িতেই থাকে, দিদার সমস্ত দায়িত্ব তার উপর। রান্না থেকে বাজারহাট, সমস্ত কাজে করিতকর্মা ফুলির হাতের সঙ্গে মুখও চলে সমানতালে, তাই দিদার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি অনর্গল। কিন্তু দিনের শেষে কনিষ্ঠ পুত্রকে হারানো সুলেখা ও গৃহছাড়া ফুলি একে অন্যের আশ্রয়-সুখ। সেই আশ্রয়-সুখ পূর্ণতা পায় চাঁদুর আগমনে। চাঁদু তার দিদা ও ছানাদাদু দু’জনেরই যত্ন নেয় সমান ভাবে, রক্তের সম্পর্কের সন্তানদের অভাব বিন্দুমাত্র টের পেতে দেয় না চাঁদু ও ফুলি। ছানাদা, চাঁদু ও ফুলি ছাড়া সুলেখার আছেন আর এক সঙ্গী রূপকথা (সোহিনী সেনগুপ্ত), তাঁর বিধবা পুত্রবধূ, যিনি প্রায়শই আসেন সাঁঝবাতি-তে।
দু’ঘণ্টার ছবি জুড়ে শিকড়ের এই ক্রাইসিসকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আর একটি সাব-প্লট, প্রোমাটারের দালালদের ভয় দেখিয়ে বাড়ি আদায়ের হুমকি, এবং এটিও বর্তমান সমাজের আর একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক সমস্যা। এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ের ওপর নির্মিত ছবিতেও পরতে পরতে রয়েছে বাস্তবতা, যে বাস্তবকে বর্তমান সমাজে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। তবে এই বাস্তবতা বেশ কিছু অংশে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। যেমন, মেদিনীপুর থেকে আসা চাঁদুর উচ্চারণে রাঢ়ী উপভাষার কোনও প্রভাব নেই কেন? ফুলির কথা বলার ভঙ্গিও, কেবল মাত্র ‘স’-এর উচ্চারণে বিকৃতি ছাড়া বেশ শহুরে।
‘সাঁঝবাতি’ অনুভূতির গল্প, তাই অনুভূতির সূক্ষ্ম মুহূর্ত এই ছবির একটি বড় ইউএসপি। এ রকম বহু দৃশ্যপটে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় অনুভূতির গল্পকথা এঁকেছেন যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তেমনই একটি দৃশ্য শেয়ার করেছেন সোহিনী সেনগুপ্ত ও লিলি চক্রবর্তী। স্বামীহারা এক স্ত্রী ও সন্তানহারা এক মায়ের কথোপকথনে এক জন বলছেন অ্যাক্সেপট্যান্সের কথা, কিন্তু বৃদ্ধ মা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন স্মৃতি— যুক্তি ও আবেগ, অতীত ও ভবিষ্যতের এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বের মধ্যেই একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠছেন দু’জনে। নিঃসঙ্গ দুই অসমবয়সী নারীর এই দৃশ্য অনবদ্য, এবং সোহিনী ও লিলির পরিমিত অথচ সূক্ষ্ম অভিনয় এই দৃশ্যকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

তবে এই সূক্ষ্মতায় মাঝেমধ্যেই ছেদ পড়ে, যা ছবির স্বাভাবিক ছন্দকে কেটে দেয়। যেমন, পাড়ার গুন্ডাদের সঙ্গে চাঁদুর মারপিটের দৃশ্যে। তেমনই একটি দৃশ্যে দেখা যায়, গভীর রাতে গাড়ি চালিয়ে চাঁদু ও ফুলি তাদের দিদার বাড়িতে ফেরার সময় একটি সংঘর্ষে। সাধারণ যুক্তি বলে, অত রাতে ছয়-সাত জন পাড়ার গুন্ডা মিলে এক জনকে ধরে মারলে চেঁচামেচিতে লোক জড়ো হয়ে যাওয়ার কথা, অথচ দোতলা থেকে দিদা ছাড়া কেউই নেমে আসে না। তা ছাড়া চড়ামাত্রার আবহসঙ্গীত ব্যবহারে এই ধরনের দৃশ্যগুলি অতিনাটকীয়তার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ছবির আর একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে দেখা যায়, বিশু, যে সুলেখাকে ক্রমাগত বাড়ি বিক্রির হুমকি দিয়ে যায়, দিওয়ালির রাতে তার লোকজনের ইচ্ছাকৃত শব্দবাজি ব্যবহারে সুলেখা গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ, যেটি সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ ঠেকে তা হল, এত কিছুর পরেও কেউ পুলিশের সঙ্গে কেন যোগাযোগ করে না বা কোনও আইনি পদক্ষেপ করে না?
এই ছবিতে লিলি চক্রবর্তীর অভিনয় অনবদ্য, বিশেষ করে তাঁর অভিনয়ের বৈচিত্র্য নজর কাড়ে। পাওলি দামের সঙ্গে রঙ্গ রসিকতার দৃশ্য থেকে বড় ছেলের অপমান সহ্য করার মতো স্পর্শকাতর দৃশ্য, সবেতেই তিনি সাবলীল ও অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছানাদাদুর চরিত্রে যথাযথ, মাননসই। পাওলি দাম ফুলির ছটফটে স্বভাব ও প্রাণচাঞ্চল্য ফুটিয়ে তুলেছেন খুব যত্ন নিয়ে, তাঁর অভিনয় ফুলিকে খুব অল্প সময়েই দর্শকদের খুব কাছের এক জন করে দেয়। দেব নিজের ছক ভেঙেছেন, প্রিমিয়ারে নিজেই বলেছেন এই ধরনের চরিত্র তাঁর প্রথম, তাই এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে, তবে উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গিতে শহুরে টান কম থাকলে চরিত্রটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হত। সোহিনী সেনগুপ্ত, তুলনামূলক ভাবে অনেক কম স্ক্রিন স্পেসে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। যেটুকু অভিনয় করেছেন, সেটুকুতেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন, অনায়াসে।

আবহসঙ্গীত দৃশ্যায়ণের সঙ্গে যথাযথ, কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট চড়া, যা কোনও কোনও দৃশ্যকে অতিনাটকীয় করে তুলেছে। ক্যামেরা আর একটু বেশি রেঞ্জ নিয়ে ব্যবহার করার জায়গা ছিল, ক্যামেরার চলাচল একটু বদ্ধ ঠেকেছে। তবে সংলাপ এই ছবিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপ দিয়েই ছবির বার্তা, পরিবারের গুরুত্ব ও সন্তানদের দায়বদ্ধতার কথা খুব সুস্পষ্ট ভাবে বার বার প্রতিষ্ঠিত করে।
‘সাঁঝবাতি’ আসলে এই ভঙ্গুর পরিবারগুলোর গল্প, যে পরিবারের ফাটল জুড়ে দিতে কখনও কখনও দৈবাৎ দেখা মিলে যায় চাঁদু-ফুলিদের। এই ভগ্নাবশেষের মধ্যেই তারা শুরু করে এক নতুন সংসার, নতুন জীবন। ‘সাঁঝবাতি’ এক দিকে ভাঙে, আর এক দিকে গড়ে, ঠিক জীবনের মতোই।

সব খবর প্রতি সকালে আপনার ইনবক্সে
main

গ্রাফিক-তিয়াসা দাস।
আল্পসে ঘেরা জেনেভায় সদ্য হানিমুন সেরে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সৃজিত-মিথিলা। প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে জামাই আদর পেয়ে বেজায় খুশি ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন বাহারি রান্নার ছবি। মেনুতে ছিল ঝিরি ঝিরি আলুভাজা, লটে শুঁটকি, পাবদা মাছ, মুরগির ঝোল এবং বাঁধাকপি দিয়ে গরুর গোস্ত। ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, “শ্বশুরবাড়ির প্রথম অফিসিয়াল ভুরিভোজ...।”
বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই। সৃজিতের অনুরাগীদের বেশিরভাগই যখন ওই সুস্বাদু পদের তারিফে মশগুল ঠিক তখনই জনৈক টুইটাররেত্তি সৃজিতকে লেখেন, “হিন্দু নামের কলঙ্ক আপনি। আগে আপনাকে সনমান (সম্মান) করতাম। কিন্তু এই পোস্ট পড়ার পর থেকে আপনাকে ঘৃণা করি। আপনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করুন। আই হেট ইউ।”
এর পরই সেই টুইটার ব্যবহারকারীকে একহাত নেন সৃজিত। তিনি পাল্টা লেখেন, “হিন্দু ধর্ম নিয়ে কথা আপনার মতো অশিক্ষিতের মুখে বেমানান। ঋক বেদ, মনুস্মৃতি ও গৃহসূত্রর কিছু শ্লোক দেব খাওয়াদাওয়া নিয়ে, রোজ সকালে কান ধরে ছাতে দাঁড়িয়ে মুখস্থ করবেন। ভদ্রভাবে বোঝালাম, নয়তো মনে রাখবেন বাইশে শ্রাবণের সংলাপ কিন্তু আমারই লেখা।”


এর পরই সৃজিতের ফ্যানেরা তাঁর প্রশংসায় ফেটে পড়েন। কেউ লেখেন, “আমি আমার কষ্টার্জিত টাকায় গরুর মাংস খেলাম না কুমিরের মাংস খেলাম না অ্যাভোকাডো খেলাম সেটা তো আমার ব্যাপার।”
কারও মতে, “ভাই, তোমাকে হিন্দু ধর্ম নিয়ে পাঠ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ভালমতো দিয়েছেন এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে একটা পরামর্শ নাও। যে ব্যক্তিকে ঘৃণা করবে, সমালোচনা করবে তার সমতুল্য জ্ঞানী হবে বা তার জ্ঞানের ছিটেফোঁটা অর্জন করে আসবে। নইলে উল্টো বাঁশ সামলানো বেশ কষ্টকর।”


Hindu dhormo nie kawtha aapnar moto oshikhkhiter mukhe bemaanan. Rig Bed, Manusmriti o Grihashutror kichhu shlok debo khawa dawa nie, roj shawkale kaan dhore chhathe dnarie mukhosto korben. Bhodrobhabe bojhalam, noyto mone rakhben Baishe Srabon er shonglaap kintu aamari lekha.

৬০ জন লোক এই সম্পর্কে কথা বলছেন

যদিও সৃজিতের বক্তব্যের বিরোধিতাও করতেও দেখা গিয়েছে কয়েক জনকে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘আপনার যা ইচ্ছা আপনি খেতেই পারেন। কিন্তু বেদ-এ এসব কিছু লেখা নেই। দয়া করে বেদ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াবেন না।”


Comments