স্যার আবেদের দাফন সম্পন্ন

রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্যার ফজলে হাসান আবেদের দাফন সম্পন্ন হয়। ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশের উন্নয়নের পালাবদলের অন্যতম পথদ্রষ্টা স্যার ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে গত শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্যার ফজলে হাসান আবেদের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: দীপু মালাকারস্যার ফজলে হাসান আবেদের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: দীপু মালাকারসকাল সাড়ে ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্যার আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: দীপু মালাকারস্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: দীপু মালাকারএরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ স্যার আবেদকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ জড়ো হন আর্মি স্টেডিয়ামে।
বনানী কবরস্থানে এসেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ছবি: দীপু মালাকারবনানী কবরস্থানে এসেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ছবি: দীপু মালাকারদুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে স্যার আবেদের জানাজা হয়। এরপর দাফনের জন্য স্যার আবেদের মরদেহ বনানীর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।



দাফন সম্পন্ন, চিরঘুমে ফজলে হাসান আবেদ
বনানী কবরস্থানের এ ব্লকের ১৫ রোডে আয়শা আবেদের কবর ছিল। সেখানে সকাল থেকে ৭ জন কবর খোঁড়ার কাজ করেন। পরে সেখানে ফজলে হাসান আবেদকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা হয় আবেদের। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নামে। পরে লাশবাহী গাড়ি রওনা হয় বনানী কবরস্থানের দিকে।
শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে মেজর আশিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে উপ সামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ শ্রদ্ধা জানান।
এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
আর্মি স্টেডিয়ামে ফজলে হাসান আবেদকে শ্রদ্ধা জানান নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসও। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।
১৯৮০ সালে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা শেষে স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বনানী কবরস্থানে তাঁর প্রথম স্ত্রী আয়েশা আবেদের পাশে সমাহিত করা হয়। 

এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার কিছু আগে স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। তার আগেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন।  

প্রথমেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ মাহবুব উল আলম হানিফ,  বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরবে নিঃশব্দে তিনি সেবামূলক কর্মকাণ্ড ছড়িয়েছেন। দেশের প্রত্যেকটি জনপদে ফজলে হাসান আবেদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত রয়েছে।  

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যারা পৃথিবীকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করেন। যুগে যুগে স্যার ফজলে হাসান আবেদের নাম লেখা থাকবে।  

নোবেলজয়ী ড মুহম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা যে বাংলাদেশ দেখছি তিনি তার রূপকার। তার বিদায়ে বিরাট শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। 


ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২৮ নভেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

Comments