প্রতি পাঁচ তরুণের চারজনই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন
৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনের চারজনই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন। অথচ দুই বছর আগেও এ ধরনের তরুণের হার ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। এই উদ্বেগের পেছনের বড় কারণ হচ্ছে, শিক্ষার দুর্বল মান ও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা।
কেবল যে বাইরের জগৎ নিয়েই দেশের তরুণদের সব উদ্বেগ, তা নয়। পরিবারের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো নিয়েও গভীর দুশ্চিন্তা আছে ৭২ দশমিক ২ শতাংশ তরুণের। পারিবারিক বন্ধন যে আলগা হয় যাচ্ছে, তা–ও ভাবাচ্ছে তাঁদের। তারপরও কিন্তু এখন তরুণেরা দেশের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিদেশ চলে যেতে চান না। কিছু তরুণ যেতে চান উচ্চতর শিক্ষার জন্য, শেষ করে ফিরতে চান দেশে। এ জন্য একটা সহায়ক পরিবেশ চান দেশের তরুণেরা। জীবনের সব দিক মিলিয়ে প্রস্তুত হওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন সাড়ে ৬৬ শতাংশ তরুণ।
দুই বছর পর তরুণদের নিয়ে আবারও জরিপ করেছে প্রথম আলো। দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে তরুণেরা দেশ, জীবন ও পরিবার নিয়ে যেসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তা প্রায় একই রকম রয়ে গেছে। কেবল জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগের মাত্রা খানিকটা কমেছে। এ দুই বছরের ব্যবধানে ইন্টারনেটের আধিপত্য আরও বেড়েছে।
দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এই দুই অর্থবছরে গড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হারের রেকর্ড নিয়েও ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে ভরসা করতে পারছেন না তরুণেরা। এ নিয়ে উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগের সঙ্গে তরুণদের দুশ্চিন্তার একধরনের সামঞ্জস্য পাওয়া যায় জরিপে। কেননা, উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও সে হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অর্থনীতিবিদেরা একে বলছেন কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি।
তাত্ত্বিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যার মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। তবে একটি দেশ জনসংখ্যাগত সুবিধা নিতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে দেশটির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার ওপর। বেশ কিছু দেশ শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে জনসংখ্যাগত সুবিধা নিতে পেরেছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং আয়ারল্যান্ড এর বড় উদাহরণ। আবার কিছু দেশ এই সুবিধা নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
কমনওয়েলথ নিয়মিতভাবে বৈশ্বিক তরুণ উন্নয়ন সূচক তৈরি করে। এই সূচক তৈরিতে পাঁচটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করা হয়। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভালো থাকা, কর্মসংস্থান ও সুযোগ, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং নাগরিক অংশগ্রহণ। দেখা গেছে, তরুণ জনসংখ্যা বেশি এমন কিছু দেশ এই সূচকে খারাপ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপেও দেখা যাচ্ছে, দেশের তরুণেরা শিক্ষার মান নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করেন, কর্মসংস্থানের চাহিদার সঙ্গে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণেই তাঁরা ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে সমানভাবে চিন্তিত। একই সঙ্গে দেশের তরুণেরা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নন, সরাসরি অংশগ্রহণে আছে অনীহা। সামাজিক আন্দোলনেই তরুণেরা তাঁদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
ব্যক্তিজীবন, পরিবার, দেশ—তরুণদের উদ্বেগের তালিকায় আছে সবকিছুই। তরুণদের মূল উদ্বেগ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে। দেখা যায়, সব শ্রেণি, পেশা, বয়স ও অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে উদ্বিগ্নতার ধরন প্রায় একই রকম। তবে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মতো অপরাধ বাড়ায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি। আর কর্মসংস্থান নিয়ে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি।
২০১৭ সালের তুলনায় এবার যেসব বিষয়ে তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে তার মধ্যে রয়েছে, জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রস্তুতি, নিজের জন্য কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা, কর্মসংস্থান এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

বেশির ভাগ তরুণ ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, চাকরির বাজারের তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে তরুণেরা পড়ালেখা শেষে বিষয়সংশ্লিষ্ট চাকরি পাওয়া নিয়ে সন্দিহান। চাকরির বাজারের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন তরুণেরা। অনেক তরুণ ইংরেজি ভাষা শিখছেন। কেউ কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মশালায় যোগ দিচ্ছেন, যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের কোচিং করছেন।
তরুণেরা বলছেন, ঢাকাকেন্দ্রিক সবকিছুর কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কর্মসংস্থানের আশায় ঢাকায় চলে আসছেন। ফলে ঢাকায় তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে। যেমন রোগী হাসপাতালে নেওয়ার পথে যানজটে আটকে সড়কেই মারা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারছে না।
শিক্ষা খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তরুণদের উদ্বেগ অনেক বেশি। নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় লেখাপড়ার মান কমে গেছে, শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে, বেকারত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে তরুণেরা মনে করছেন।
তরুণেরা বলছেন, ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া, গাছপালা না থাকা ঢাকাকে পৃথিবীর অন্যতম বসবাস অযোগ্য শহরে পরিণত করেছে। সড়ক ও নৌপথের দুর্ঘটনায় নিয়মিত প্রাণহানি ঘটছে। এ কারণে ভ্রমণও ভীতিকর হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়া তরুণদের উদ্বেগের কারণ হিসেবে আরও বেশ কিছু বিষয় জরিপে উঠে এসেছে। এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি, গণতন্ত্রহীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত হওয়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা, খেলার মাঠ না থাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসমতা, লোকজন অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক, দক্ষতা বাড়াতে উদ্যোগের অভাব অন্যতম।
জরিপে সাক্ষাৎকার পর্বে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব কতটা পড়বে এবং দেশের প্রস্তুতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এর প্রভাবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি যে কেবল বাধাগ্রস্ত হবে তা নয়, অনেকে চাকরিও হারাবেন। বিশেষ করে পোশাক ও খুচরা পর্যায়ে। এমনকি ই-কমার্স খাতেও বাধা পড়বে। রোবটের কারণে চাকরি হারাবেন মানুষ। এমনকি বিদেশে কর্মরতরা সংকটে পড়বেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময় তরুণদের কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে, তা আগে থেকে ধারণা করা কঠিন। অন্যদিকে ৫ জন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশ এ সময়ের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। সুতরাং, এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে তরুণদের চিন্তাভাবনা অবশ্য মিশ্র। কেউ কেউ মনে করেন, বড় কোনো প্রভাব পড়বে না এবং শুরুতে চাকরি হারাতে হলেও পরে তা সমন্বয় করা সম্ভব হবে। তবে শ্রমঘন শিল্পে সমস্যা হলেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুযোগ বাড়বে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ, গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানুষের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এবারের জরিপের বিশেষ দিক হচ্ছে তরুণদের কাছ থেকে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়গুলো জানার পর এ নিয়ে কথা বলা হয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এ সময়ে তরুণদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী। তাঁরা বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। যেমন ২১ শতকে টিকে থাকার মতো দক্ষতার অভাব আছে তরুণদের মধ্যে, আছে মূল্যবোধ ও সহনশীলতার অভাব। সংকট নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও। অন্যতম বড় সংকট শিক্ষায়। তরুণদের এ ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হয়। সবচেয়ে বড় বাধা পান শিক্ষাজীবন শেষ করে। কারণ, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, তরুণেরা বই পড়া ও খেলাধুলা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন বলা যায়। এর পরিবর্তে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেশি সময় দিচ্ছেন, এতে তরুণেরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছেন। আবার তরুণদের চিন্তা ও দেখার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে জাতীয়তাবাদ অথবা ধর্ম। সবশেষে তরুণদের নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাঁদের সামনে এমন কোনো ‘রোল মডেল’ নেই, যাঁদের অনুসরণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে।
তাহলে তরুণদের করণীয় কী? সাক্ষাৎকারে প্রশ্নটি রাখা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের কাছে। তাঁরা আটটি পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ বাড়ানো এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝে লেখাপড়া করা, শারীরিক সামর্থ্য বজায় রাখা, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকতে নিজেদের প্রস্তুত করা, কর্মসংস্থান বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক প্রভাব এবং মাদক ও সামাজিক মাধ্যমের নেশা থেকে দূরে থাকা, আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা বজায় রাখা, দেশ ও পরিবারের কথা ভাবা এবং চারিত্রিক উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের বই পড়া।
সরকারের কাছে কী চান—সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়েছিল তরুণদের কাছে। তাঁদের চাহিদার তালিকা বেশ লম্বা। যেমন শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, বিশেষ করে গ্রামে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষা খাত থেকে রাজনীতি দূরে রাখা, শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পড়াশোনার চাপ কমানো, প্রযুক্তি শিক্ষাকে সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা, বিনা মূল্যে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, উদ্যোক্তা হতে সহজে মূলধন পাওয়ার ব্যবস্থা করা, কর্মসংস্থান তৈরিতে নতুন নতুন শিল্প খাত প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান–উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা, মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসায়ী চক্রকে নির্মূল করা, বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো, ১৬ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং মেধাবীদের দেশে ধরে রাখার জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেতনের ব্যবস্থা করা।
- Get link
- X
- Other Apps
Labels:
Get a $500 Bank of America Gift Card Law
Gift Card
Gift Card Walmart Law
https://amzn.to/2D4eOaW
https://amzn.to/2OdsKFO
https://amzn.to/33umJJj
https://amzn.to/34vJOfZ
https://www.youtube.com/watch?v=ifA6MHBTYLE
Michelle Obama shares 'Happy Thanksgiving' message with photo of family
Walmart
Comments